তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃক মশা ধ্বংস করতে ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব, সময়ে সময়ে বৃষ্টিপাত এবং লকডাউনের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ফলে আবারও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
পতঙ্গবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে মশা বাহিত ডেঙ্গুরোগ গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কারণ দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে শানাক্ত হলেও কোনো মৃত্যু হয়নি। তবে গত বছরে এ সময়ে মাত্র ১৩১ জন আক্রান্ত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গত সপ্তাহে বলেন, এডিশ মশার বংশ বিস্তার করতে পারে এমন স্থানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে কিনা, তা তদারকি করতে ১০ মে’র পর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
সব ভবনের ভেতর ও বাইরে জমে থাকা পানিগুলো অপসারণের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি সেখানে এডিস মশার প্রজণন কেন্দ্র খুঁজে পায় তাহলে তার মালিককে জরিমানা করা হবে।’
ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিশ মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে বংশ বিস্তার করে। এজন্য ঘর, ছাদ, বাথরুম, বারান্দা বা নির্মাণাধীন স্থানগুলোতে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখতে হবে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই মশা দমনের জন্য এক বছরের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে।
সরকারি তথ্য মতে, গত বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তাদের এলাকায় মশার উপদ্রুব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার লোকজন ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্নস্থানে জমে থাকা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন শুধু সড়কগুলোতে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।কিন্তু এমন অনেক অলি-গলি থেকেই যাচ্ছে যেখানে মশার জন্ম নিচ্ছে।
মিরপুর-৬ এলাকার বাসিন্দা শামসুননাহার দোলন জানান, গণপরিবহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পরে মনে হচ্ছে মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। নগরীর রাস্তা ও ড্রেনগুলোতে জমে থাকা পানিতে প্রচুর মশা দেখা যাচ্ছে।
‘গত বছরের মতো এবারও এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছি। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে এবং অন্যরা বাড়িতে রয়েছেন। তাই মশা যেখানে সেখানে প্রজণন করছে। করোনাভাইরাসের পাশাপাশি এখনই এই দিকে মনোনিবেশ করা উচিত,’ যোগ করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ কবিরুল বাশার বলেন, যেহেতু চলতি মাসের গোড়ার দিক থেবেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং করোনার কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করেছে। ফলে বৈজ্ঞানিক মডেলের দিকে তাকালে এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে গত বছরের তুলনায় এই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘লকডাউন চলাকালীন লোকেরা ঘরে থাকায় নগরীর অলি-গলিতে ব্যাপক মশা জন্মেছে। এমনকি সিটি করপোরেশনও এজন্য সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এই সময়ে মশা প্রজণন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকাল জুন থেকে পুরোদমে শুরু হবে এবং এডিস মশার সংখ্যা হ্রাস করতে এবং প্রজণন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
জাবি শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন নির্মাণধীণ স্থান, বাস টার্মিনাল, থানা- যেখানে অনেক জব্দ করা যানবাহন খোলা স্থানে রাখা রাখে, বিভিন্ন হাসপাতালের সামনের ও উঠোন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এডিস মশার মূল প্রজণন উৎস।
এক্ষত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং এডিস মশার প্রজনন উত্স সনাক্তকরণ এবং ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে এ বিশেষজ্ঞ।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ড. মো. শরিফ আহমেদ বলেন, তারা তাদের সারাবছরের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মশা এবং মশার প্রধান প্রজণন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসে কাজ করে যাচ্ছেন।
‘আমরা এখানে মশা ধ্বংস করতে নিয়মিত কাজ করি যাতে আমরা আগের বছরের মতো এই বছর কোনও প্রাদুর্ভাব দেখতে না হয়,’ যোগ করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন বলেন, তারা মশা নিধনের পাশাপাশি সচেতনাতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছেন।
‘আমরা এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। আমরা রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, বিআরটিএ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিডব্লিউডিবি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মেট্রোরেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।